এখনো অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে আছে কক্সবাজারের টেকনাফে উৎপাদিত কয়েক হাজার মেট্রিক টন লবণ। মালিকরা এসব লবণ মাঠের আশেপাশে মজুদ করে রেখেছেন। উৎপাদন খরচের চেয়ে লবণের মূল্য অনেক কম হওয়ায় বিক্রি না করেই তারা এসব লবণ রেখে দিয়েছেন। গত ২ মৌসুমের পর্যাপ্ত লবণ অবিক্রিত আছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ব্যবসায়ীরা টেকনাফ-কক্সবাজার সড়কের দুপাশে অবিক্রিত লবণ মওজুদ করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে মজুদ রাখা লবণ লোকসানের কারণেই রেখে দিয়েছেন। গত দুই মৌসুমের অবিক্রিত লবণ এখনো পলিথিন দিয়ে ঢেকে রেখেছেন।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (বিসিক) সূত্রে জানা যায়, গত মৌসুমে কক্সবাজারে ১৮ লাখ ২৪ হাজার মেট্রিকটন লবণ উৎপাদন হয়েছে। বিক্রির পর বর্তমানে মাঠপর্যায়ে সাড়ে ৪ লাখ মেট্রিকটন লবণ অবিক্রিত আছে। লবণ নিয়ে পরিস্থিতি এমন অবস্থায় গিয়ে দাড়িঁয়েছে খোদ কৃষক এবং ব্যবসায়ীরা পর্যন্ত চাষে আগ্রহ হারাতে বসেছেন। কম মূল্যের কারণে হাজার হাজার মেট্রিকটন লবণ যেখানে অবিক্রিত মাঠে পড়ে আছে সেখানে কিছু ষড়যন্ত্রকারী চক্র লবণকে পেঁয়াজের মতো কাহিনী বানানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। আসলে লবণ দাম একেবারেই কম। বর্তমানে প্রতিমণ লবণের মূল্য ১৯০ টাকা। তার মানে প্রতি কেজি ৫ টাকারও কম। প্রতিমণ লবণ উৎপাদনে কৃষকের খরচ পড়েছে ২০০ টাকা।
লবণ ব্যবসায়ী আব্দুল গাফফার ও আব্দুস ছালাম কালু জানান, উৎপাদনের চেয়ে মূল্য কম হওয়ায় বিগত মৌসুমের ১৫ টন লবণ অবিক্রিত পড়ে আছে। খরচ না পোষালে কিভাবে লবণ ব্যবসা করব? প্রতি বছর লোকসান দিয়ে এভাবে ব্যবসা করা যায় না।
হ্নীলা লবণ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হোছাইন মুহাম্মদ আনিম বলেন, ‘ন্যায্য মূল্য পাওয়ার আশায় গত মৌসুমে লবণ জমিয়ে বড় ধরনের ভূল করেছি। লবণ চাষ করে বর্তমানে লাখ লাখ টাকার ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছি।’
হ্নীলা লবণ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ছাবের খাঁন বলেন, ‘শুধু হ্নীলাতেই ১৫ হাজার মেট্রিকটন লবণ অবিক্রিত পড়ে আছে। উৎপাদন খরচের চেয়ে মূল্য কম হওয়ায় লোকসান হচ্ছে বিধায় চাষীরা ওই লবণ এখনো জমা রেখেছেন। পরবর্তী মৌসুম চলে আসার সময় হলেও ব্যবসায়ীরা লবণ বিক্রি করতে পারছেন না। তিনি লবণের ন্যায্য মূল্য বৃদ্ধির জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।’
বিসিক টেকনাফের ইনচার্জ মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘লবণ নিয়ে গুজব ছড়িয়ে লাভ নেই। মূল্য কম হওয়ায় টেকনাফেও ১৫ হাজার মেট্রিকটন লবণ অবিক্রিত আছে। বিশেষ একটি শ্রেণী ফায়দা লুটিয়ে সকারেক বিভ্রান্ত করার জন্য অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। মূল্য না থাকায় শুধু কক্সবাজারসহ পুরো দেশে সাড়ে ৬ লাখ মেট্রিকটন লবণ অবিক্রিত আছে।’
টেকনাফ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও কক্সবাজার জেলা পরিষদ সদস্য মো. শফিক মিয়া বলেন, ‘আমি স্বয়ং একজন লবণ উৎপাদনকারী। বর্তমানে টেকনাফসহ সারাদেশেই পর্যাপ্ত পরিমাণ লবণ মজুদ রয়েছে। ন্যায্য মূল্য না থাকায় বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।’
পাঠকের মতামত: